শিক্ষার পর স্বাস্থ্য। আবার হইচই বাধল সরকারি স্তরে 'ব্যর্থতা'র অভিযোগ নিয়ে। মা ও শিশুর মৃত্যু হার কমানোই তাঁর সরকারের মূল লক্ষ্য বলে বারবার ঘোষণা করছেন মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অথচ তাঁর বাড়ি থেকে কয়েক পা দূরে একটি সরকারি হাসপাতাল থেকে এক সদ্য প্রসূতিকে ফিরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠল। পরে ওই প্রসূতি মারা যান। তাঁর সদ্যোজাত যমজ সন্তান আপাতত ওই চিত্তরঞ্জন সেবাসদন হাসপাতালের শিশু সদনেই চিকিৎসাধীন। সরকারি হাসপাতালে প্রসূতির কার্ড থাকা সত্ত্বেও ওই মহিলাকে ফিরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠায় এই বিতর্কই ফের সামনে এসেছে যে, প্রচার চললেও আরও নানা দফতরের মতো স্বাস্থ্যেও পরিস্থিতির আদতে কোনও 'উন্নতি' হয়নি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা যে হেতু সাতটি দফতরের মধ্যে স্বাস্থ্যও নিজের হাতেই রেখেছেন, তাই হইচই হচ্ছে বেশি। প্রাক্তন স্বাস্থ্যমন্ত্রী এবং অধুনা বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র যেমন বলেছেন, "ঠিক কী ঘটেছে, আমি জানি না। স্বাস্থ্যে এমন দুভার্গ্যজনক ঘটনা মাঝেমধ্যে ঘটে। তবে যা-ই হোক, মুখ্যমন্ত্রীর স্বাস্থ্য দফতর ছেড়ে দেওয়া উচিত।" স্বাস্থ্য দফতর অবশ্য প্রথামাফিক ঘটনাটির তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। তবে স্বাস্থ্যকর্তাদের প্রাথমিক ধারণা, হাসপাতাল প্রত্যাখ্যান করেনি। বাড়িতেই প্রসব ও সেই সংক্রান্ত জটিলতার জেরে ওই মহিলা মারা গিয়েছিলেন। সেই অবস্থাতেই তাঁকে হাসপাতালে আনা হয়েছিল। তার পর ময়নাতদন্ত ইত্যাদি 'স্পর্শকাতর' বিষয় এড়াতে বাড়ির লোকজনই তাঁর দেহ ফিরিয়ে নিয়ে যান। স্বাস্থ্যকর্তাদের আরও বক্তব্য, ঊষাদেবীর আরও সাতটি সন্তান রয়েছে। তাঁর শরীরের অবস্থা এমনিতেই খারাপ ছিল। তার উপর বাড়িতে প্রসবের পরে তিনি নিজেই যমজ সন্তানের নাড়ি কাটেন। সেই সময়েও রক্তপাত শুরু হয়। তার থেকেই তাঁর মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে। |
গোটা বিতর্ক সামনে এনেছে শহরের দুই সরকারি হাসপাতাল চিত্তরঞ্জন সেবাসদন ও শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালকে। শুক্রবার ভোর থেকে যে ঘটনার সূত্রপাত। মেয়ো রোডের কাছে এক ঝুপড়ির বাসিন্দা ঊষা তাঁতির যমজ সন্তান হয় বৃহস্পতিবার রাতে। তাঁর স্বামী টিটু তাঁতি জানান, চিত্তরঞ্জন সেবা সদনে তাঁর স্ত্রীর প্রসব সংক্রান্ত কার্ড করানো ছিল। কিন্তু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আগে বাড়িতেই তাঁর প্রসব হয়ে যায়। নিজেই ব্লেড দিয়ে সন্তানদের নাড়ি কাটেন ঊষাদেবী। শুক্রবার ভোরে অবস্থার অবনতি হওয়ায় চিত্তরঞ্জন সেবাসদনের শরণাপন্ন হন তাঁর স্বামী। মৃতার স্বামীর অভিযোগ, চিকিৎসার কোনও ব্যবস্থা না-করেই ওই হাসপাতাল থেকে তাঁদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়। বলা হয়, ওখানে প্রসব হয়নি। তাই তাদের কোনও দায়িত্ব নেই। এর পর মুমূর্ষু স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে টিটু শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে যান। অভিযোগ, সেখানে চিত্তরঞ্জনের কার্ড দেখে বলা হয়, অন্য হাসপাতালের 'কেস'। তাদের কিছু করার নেই। দুই হাসপাতাল ঘুরে ফের ঝুপড়িতেই ফিরে আসেন তাঁরা। সেখানেই কিছু ক্ষণ পরে মৃত্যু হয় ঊষাদেবীর। ঝুপড়ির সামনের রাস্তাতেই ওই মহিলার মৃতদেহ পড়ে ছিল বলে প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন। প্রবল ঠান্ডায় রাস্তায় পড়ে ছিল দুই সদ্যোজাতও। বেবি বিবি নামে এক দিনমজুর ওই অবস্থা দেখে টিটু ও তাঁর দুই সদ্যোজাতকে নিয়ে ফের চিত্তরঞ্জন সেবাসদনে আসেন। দ্বিতীয় দফায় শিশু দু'টিকে ভর্তি করা হয় ওই হাসপাতালেরই শিশু সদনে। একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রতিনিধিরা এসে বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করেন। ওই সংগঠনের তরফে নিতাইদাস মুখোপাধ্যায় বলেন, "প্রবল ঠান্ডায় বাচ্চা দু'টি রাস্তায় পড়ে ছিল। বেবি নামে ওই দিনমজুর মহিলা ওদের হাসপাতালে ভর্তি করাতে উদ্যোগী না-হলে ওরা হয়তো মারা যেত। ওই মহিলাই আমাদের বিবেক!" শিশু সদনের অধ্যক্ষা মালা ভট্টাচার্যের বক্তব্য, শিশু-সহ কোনও প্রসূতি তাঁদের কাছে আদৌ আসেননি। ফুটপাথে পড়ে-থাকা দুই সদ্যোজাতকে নিয়ে এক মহিলা এসেছিলেন। মালাদেবী বলেন, "শিশু দু'টির ওজন অত্যন্ত কম। ঠান্ডায় প্রায় নীল হয়ে এসেছিল। অবস্থা দেখে সঙ্গে সঙ্গে তাদের ভর্তি করে নেওয়া হয়েছে। আপাতত শিশু দু'টি ওয়ার্মারে রয়েছে।" মা ও শিশুর মৃত্যুর হার কমাতে নিরাপদ প্রসবের জন্য সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যেতে প্রচার-অভিযান চালাচ্ছে কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকার। বিশেষত, সেই কারণেই বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক অন্য মাত্রা পেয়ে গিয়েছে। শুরু হয়ে গিয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোরও। প্রাক্তন স্বাস্থ্যমন্ত্রী সূর্যবাবুর যেমন যুক্তি, "স্বাস্থ্য একটি জটিল দফতর। সাতটা দফতরের সঙ্গে এটা চালানো যায় না। |
চিকিৎসক নিয়োগ থেকে নার্সের পদপূরণ, কোনওটাই ঠিক ভাবে হচ্ছে না। শিশু মৃত্যুর সময় যা বলেছিলাম, এখনও তা-ই বলছি। ওঁর (মুখ্যমন্ত্রী) স্বাস্থ্য দফতরের দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়া উচিত।" বাম জমানায় সূর্যবাবুর হাতে এক সময় স্বাস্থ্যের সঙ্গেই পঞ্চায়েত দফতরও ছিল। দুই দফতর একসঙ্গে সামলাতে তিনি 'ব্যর্থ' বলে অভিযোগ উঠত। সেই যুক্তিতেই এখন বিরোধী শিবিরে গিয়ে সূর্যবাবুরা প্রশ্ন তুলছেন, স্বরাষ্ট্র, ভূমি, স্বাস্থ্য, সংখ্যালঘু উন্নয়নের মতো এতগুলি দফতর একসঙ্গে হাতে রাখলে কোনওটির প্রতিই 'সুবিচার' করা যায় কি না। বিরোধী শিবিরের এক নেতার কথায়, "স্বাস্থ্য ভবনে মন্ত্রীর জন্য একটি ঘর রয়েছে। সেখানে বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালের সর্বশেষ সমস্ত তথ্য-পরিসংখ্যানও পাওয়ার আধুনিক ব্যবস্থা রয়েছে। অথচ গত সাত মাসে মুখ্যমন্ত্রী একবারও স্বাস্থ্য ভবনে যাওয়ার সময় করে উঠতে পারেননি। এক বার যেতে গিয়েও সংবাদমাধ্যমের বাড়াবাড়িতে মাঝপথ থেকেই ফিরে এসেছিলেন।" সূর্যবাবুর বক্তব্য, চিকিৎসক নিয়োগের জন্য বাম জমানার শেষ দিকে যে প্যানেল করা হয়েছিল, বিধানসভা ভোট এসে যাওয়ায় তখন নিয়োগ হয়নি। নতুন সরকার সাত পেরিয়ে আট মাসে পড়লেও চিকিৎসক নিয়োগের কাজ এগোয়নি। রোগী প্রতি নার্সের অনুপাতও তথৈবচ। অথচ স্বাস্থ্য এমন একটি দফতর, যেখানে সরকারি কর্মীর সংখ্যা সব চেয়ে বেশি। প্রতি মাসেই বেশ কিছু কর্মী অবসর নিচ্ছেন অথচ তাঁদের শূন্যস্থান ভরাট হচ্ছে না। পরিকাঠামো ছাড়াই নতুন নতুন মাল্টি-স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল তৈরির ঘোষণা হয়ে চলেছে! সূর্যবাবুর কথায়, "চিকিৎসকদের প্রতি প্রশাসনের তরফে যে আচরণ করা হচ্ছে, কলেজ অধ্যক্ষদের মতোই সরকারি ক্ষেত্রে চিকিৎসকেরা কাজ করতে চাইবেন না!" বিরোধী দলনেতার সমালোচনা ফিরিয়ে দিয়ে দমকলমন্ত্রী জাভেদ খান মহাকরণে বলেছেন, "সূর্যবাবু দায়িত্বে থাকার সময়েই স্বাস্থ্য দফতরের সর্বনাশ করে দিয়েছিলেন। এখন তিনিই আবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমালোচনা করছেন! মানুষ এটা ক্ষমা করবে না।" দমকলমন্ত্রী এ-ও বলেন, "সূর্যবাবু চোখ বুজে স্বাস্থ্য দফতর সামলাতেন। এখন চোখ বুজেই সমালোচনা করছেন! তা না-হলে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে নানা উন্নতি ওঁর নজরে পড়ত।"
| 'গানটা থামান, লক্ষ্মী', আর্তি আউটডোরের রোগীদের পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায় • কলকাতা | | বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে দশটা। নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের হেমাটোলজি আউটডোরে স্ট্রেচারে শুয়ে মাজদিয়ার বাসিন্দা, বছর চুয়াল্লিশের মাধব কাঞ্জিলাল। ভিড়ে ঠাসা আউটডোরে চারপাশের আওয়াজে তখন এমনিতেই কান পাতা দায়। তার মধ্যেই রক্তের ক্যানসারে আক্রান্ত মাধববাবুর মাথার কাছে সাউন্ডবক্সে তারস্বরে বাজছে 'আকাশ ভরা সূর্য তারা...।' কয়েকটা পরীক্ষা করিয়ে আনার কথা বলছিলেন আউটডোরের চিকিৎসক। তুমুল কোলাহল আর গানের 'গুঁতো'য় প্রায় চার বারের চেষ্টায় তা পুরোপুরি বুঝতে পারলেন মাধববাবুর সঙ্গে আসা আত্মীয়। শহরের একাধিক সরকারি হাসপাতালের ছবিটা এখন এ রকমই। কারণ কর্তৃপক্ষ মনে করছেন, এটা রোগীদের পক্ষে 'ভাল'। অথচ, হাসপাতাল-নার্সিংহোম 'সাইলেন্ট জোন'। তার ভিতরে বা আশপাশে হর্ন বা মাইক বাজানো বারণ। নিষেধ জোরে শব্দ করে মিটিং-মিছিলও। তা হলে কেন এ ভাবে গান চলছে হাসপাতালে? কর্তৃপক্ষের দাবি, এটা 'মিউজিক থেরাপি' এবং এতে বরং রোগীর শারীরিক-মানসিক উন্নতিই হবে। মন ভাল থাকবে তাঁর সঙ্গে আসা আত্মীয়-বন্ধুদেরও। সাইলেন্ট জোন হলেও তাই সাউন্ডবক্সে রবীন্দ্রসঙ্গীত বাজানো যেতেই পারে। অতএব কলকাতার বেশ কিছু সরকারি হাসপাতালের আউটডোরে নিয়ম করেই গান বাজানো চলছে। গানে রোগ সারানোর এ নিয়ম কি স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশে? নীলরতন সরকারের প্রাক্তন সুপার লক্ষ্মীকান্ত ঘোষ ও কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের সুপার সিদ্ধার্থ চক্রবর্তীর জবাব, "স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশ ছিল না। এটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নিজস্ব সিদ্ধান্ত। কারণ তাঁরা দেখেছেন, আউটডোরে অপেক্ষা করতে করতে রোগী ও তাঁর আত্মীয়েরা ক্লান্ত হয়ে যান। গানে একঘেয়েমি কাটে।" কিন্তু ডাক্তার দেখাতে এসে গান অসুস্থদের সত্যিই ভাল লাগছে কি না, তা কখনও খোঁজ নেওয়া হয়েছে কি? সুপারেরা বলেন, "গান খারাপ লাগার কথা নয়। মিউজিক থেরাপি সারা বিশ্বে জনপ্রিয়।" কিন্তু সরকারি হাসপাতালে অসংখ্য লোকের ভিড়ে আউটডোর যেখানে এমনিতেই নরক গুলজার অবস্থা, সেখানে গান বাজানোটা রোগী বা তাঁদের পরিজনদের পক্ষে কি আদৌ স্বস্তিদায়ক? স্বাস্থ্যকর্তারা মানছেন, আউটডোরে গান বাজানোটা ততটা স্বস্তিদায়ক না-ও হতে পারে। তবে বিভিন্ন ওয়ার্ডে গান চালানোর ভাবনাকে স্বাগত জানিয়েছেন তাঁরা। আরও জানিয়েছেন, বেসরকারি বেশ কিছু হাসপাতালে অনেক দিন আগে থেকেই অপারেশন থিয়েটারে হাল্কা মিউজিক বাজানো হয়। তাতে রোগী ও চিকিৎসক দু'জনেরই মানসিক চাপ কমে। এ ক্ষেত্রে হাসপাতালকে 'সাইলেন্ট জোন' হিসেবে দেখলে চলবে না, বরং 'মিউজিক থেরাপি'-র উপকারিতা ভাবতে হবে। রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী বলেন, "আউটডোরে গান চালানোটা যুক্তিযুক্ত নয়। সেখানে এমনিতেই আওয়াজ বেশি। তবে কিছু ওয়ার্ডে গান বাজতে পারে। যেমন লেবার ওয়ার্ড, শিশু বিভাগ, ক্যানসার ওয়ার্ড। এটা থেরাপির মধ্যেই পড়ে।" তিনি জানান, কাটোয়া হাসপাতালে লেবার রুমে রবীন্দ্রসঙ্গীত বাজানো হচ্ছে। বিভিন্ন জেলার ১২টি হাসপাতাল সম্প্রতি উন্নত পরিষেবার স্বীকৃতি হিসেবে আইএসও সার্টিফিকেশনের আবেদন করছে। এর জন্য ওই হাসপাতালগুলিতে নতুন যে সব ব্যবস্থা চালু হচ্ছে, তার অন্যতম হল ওয়ার্ডে রোগীদের রবীন্দ্রসঙ্গীত শোনানো। দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলা হাসপাতাল এমআর বাঙুরেও ২৬ জানুয়ারি ও ১৪ ফেব্রুয়ারির মতো দু'টি দিনকে 'টার্গেট' করেছেন। এর মধ্যে যে কোনও এক দিন থেকে তাঁদের কিছু আউটডোরে রবীন্দ্রসঙ্গীত ও লঘুসঙ্গীত বাজানো শুরু হবে। স্বাস্থ্য দফতরের ভাবনা যা-ই হোক, 'সঙ্গীতময়' আউটডোরে রীতিমতো তিতিবিরক্ত হয়ে পড়ছেন অপেক্ষমাণ রোগী ও পরিজনেরা। নীলরতনের আউটডোরের সাউন্ডবক্সে রোগীদের জন্য তথ্য এত আস্তে প্রচারিত হচ্ছে যে কারও কানে ঢুকছে না। অথচ গান শুরু হলেই আওয়াজ বেড়ে যাচ্ছে। নিউরোলজির আউটডোরে অসুস্থ ছেলেকে নিয়ে হয়রান নৈহাটির মুন্নি ঝা। গানের ব্যাপারে প্রশ্ন করতেই ঝাঁঝিয়ে উঠলেন, "চারদিকে ভিড়, আওয়াজ, বাচ্চার ঘ্যানঘ্যান, তার উপরে এই গান! বিনা পয়সায় ওষুধ দিতে পারে না, অথচ গান শোনাবে!" আউটডোর ভবনের প্রতিটি তলায় ওঠার মুখেই হেল্প ডেস্ক। মাথার উপরে সাউন্ডবক্সে "ক্ষণে ক্ষণে, মনে মনে শুনি...!" নানা তথ্য জানতে ডেস্কের শরণাপন্ন হতে হচ্ছে অনেককেই। এ দিকে, চেঁচামেচি আর গান মিলিয়ে এমন জটিল অবস্থা যে, কাউকে তিনতলায় যেতে বললে ভাল শুনতে না পেয়ে তিনি দোতলায় হাঁটা লাগাচ্ছেন। হতাশ সহায়িকা বলেই ফেললেন, "কী করব, নিয়ম যখন, গান শুনতেই হবে।" কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের নতুন আউটডোর ভবনেও ছবিটা একই রকম। একসঙ্গে এতগুলি বিভাগের আউটডোরের অসংখ্য রোগী, তাঁদের বাড়ির লোক, চিকিৎসক-চিকিৎসা কর্মীর গলার আওয়াজ, মাঝেমধ্যে রোগীদের জন্য নানা সতর্কীকরণ, আর সঙ্গে বক্সে চলা রবীন্দ্রসঙ্গীত! কোন ঘর থেকে কে কার নাম আর নম্বর ধরে ডাকছেন, অর্ধেকে তা বুঝেই উঠতে পারছেন না। বৃহস্পতিবার দুুপুরেও আউটডোর জুড়ে বেজেছে "আমার জীবনপাত্র উচ্ছলিয়া...।" হরিনাভি থেকে আসা দীপক ভট্টাচার্য বলেই ফেলেন, "এ কী জুলুম রে বাবা! অসুস্থ শরীরে কিছু ভাল লাগছে না। কোথায় নাম লেখাব, কোথায় টেস্ট করাব সে সব খুঁজে পেতে দম বেরিয়ে যাচ্ছে। তার মধ্যে জোর করে গান শোনাচ্ছে!"
সেলাই তো করবে চতুর্থ শ্রেণির কর্মী, দাবি ডাক্তারের | গৌরব বিশ্বাস • করিমপুর | শাড়ির আঁচলে আপ্রাণ চেপে রয়েছেন ছেলের থুতনি। স্কুলের সাদা জামা রক্তে ভিজে গিয়েছে। প্রায় সংজ্ঞাহীন ছেলেকে টেনে হিঁচড়ে হাসপাতালময় ছুটে বেড়াচ্ছেন মা, 'একটু সেলাই করে দেবেন, থুতনিটা ফাঁক হয়ে গিয়েছে!' জরুরি বিভাগে কেউ নেই। নদিয়ার করিমপুর হাসপাতালে শুক্রবার দুপুরে প্রায় আধ ঘণ্টা ছুটোছুটির পরে চিকিৎসক মিললেও রক্তাক্ত ছেলে আঁকড়ে মিঠু মণ্ডলকে শুনতে হয়েছিল, "সেলাই? তা কি চিকিৎসকের কাজ নাকি, হাসপাতালের কোনও চতুর্থ শ্রেণির কর্মীকে বলুন।" প্রত্যন্ত সেনপাড়া গ্রাম থেকে ছুটে আসা মিঠুদেবী হতভম্ব হয়ে ছেলেকে নিয়ে ছোটেন 'চতুর্থ শ্রেণির' কর্মীর খোঁজে। মিনিট পনেরো খোঁজাখুঁজির পরে তাঁদের কয়েক জনকে পেয়েও যান তিনি। এ বার শুনতে হয়, "সেলাই তো চিকিৎসকদের কাজ। আমরা কেন করব?" পড়ি কি মরি করে ফের সেই কর্তব্যরত চিকিৎসকের কাছে গিয়ে এ বার মিঠুদেবী ফিরে পান আরও ঝাঁঝালো শ্লেষ, "ওরা না পারলে সুপারকে বলুন, উনি ভাল সেলাই করেন!" ঘণ্টা দেড়েক ধরে এমনই টানা হেঁচড়ায় সপ্তম শ্রেণির শৌভিক ততক্ষণে জ্ঞান হারিয়েছে। | | করিমপুর হাসপাতালে মায়ের সঙ্গে শৌভিক। নিজস্ব চিত্র | সংজ্ঞাহীন ছেলেকে আঁকড়ে মায়ের কান্না দেখে বহির্বিভাগে আসা রোগীর বাড়ির লোকজন এ বার এগিয়ে আসেন। তাঁদের হইচই শুনেই শুরু হয় দৌড়ঝাঁপ। ছুটে আসেন হাসপাতালের সুপার বিধুভূষণ মাহাতো। খবর পেয়ে হাসপাতালে আসেন স্থানীয় করিমপুর পঞ্চায়েতের উপপ্রধান কংগ্রেসের তারক সরখেল। চাপে পড়ে শেষ পর্যন্ত শৌভিকের ফাটা থুতনিতে চারটি সেলাই করেন ওই চিকিৎসক, সুদীপা মণ্ডল। তবে এ দিনের ঘটনায় সরকারি হাসপাতালের 'অমানবিক' ছবিটা যে ফের এক বার সামনে এসে পড়েছে তা কবুল করেন তৃণমূলের স্থানীয় ব্লক সভাপতি চিররঞ্জন মণ্ডল। তিনি স্পষ্টই বলেন, "সরকারি হাসপাতালগুলিতে চিকিৎসকেরা আর যাই করুন চিকিৎসা করার ব্যাপারে যে তাঁদের মন নেই তা আরও এক বার স্পষ্ট হয়ে গেল।" ওই হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির সভাপতি তথা স্থানীয় বিধায়ক সিপিএমের সমরেন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, ''সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার গাফিলতি যে চরম সীমায় পৌঁছেছে শুক্রবারের ঘটনা তা আরও এক বার প্রমাণ করল।" ঘটনায় ক্ষুব্ধ নদিয়ার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অমিত হালদার বলেন, ''এমন ঘটনা মোটেই বরদাস্ত করা হবে না। ওই চিকিসককে শো-কজ করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্তও শুরু হয়েছে।" তবে, চিকিৎসক সুদীপা মণ্ডলের কোনও অনুতাপ নেই এ দিনের ঘটনায়। তিনি বলেন, ''সেলাই, ব্যান্ডেজ করার কাজগুলো তো হাসপাতালে চতুর্থ শ্রেণীর কর্মীরাই করেন। এতে ভুল তো কিছু দেখছি না। ওরা সে কাজ করতে অস্বীকার করায় আমি ওই মহিলাকে ভাল একটা সুচ নিয়ে আসতে বলেছিলাম। কারণ হাসপাতালে সেলাই করার সুচগুলোর তেমন ব্যবহার যোগ্য নয়। এই সামান্য ঘটনায় এমন হইচই হবে ভাবিইনি।" সেনপাড়া গ্রামের শৌভিক সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। এ দিন সকালে সাইকেলে স্কুলে যাওয়ার সময়ে বড় রাস্তার উপরেই পড়ে গিয়ে তার থুতনি ফেটে যায়। ছেলে পড়ে গিয়েছে জানতে পেরেই ছুটে এসেছিলেন মিঠুদেবী। ছেলেকে নিয়ে তিনি একাই ছোটেন হাসপাতালে। তিনি বলেন, "খুব কষ্ট করে ছেলেকে হাসপাতালে এনেছিলাম। ভেবেছিলাম এক বার হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারলে আর চিন্তা নেই। এখন দেখছি ওখানে নিয়ে গিয়েই সমস্যা বাড়ল।"
ন্যাশনাল মেডিক্যাল | শিশু চুরিতে প্রশ্নের মুখে সুরক্ষা ব্যবস্থা | নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা | ইঁদুর-বিড়ালের দৌরাত্ম্য আছে। পিঁপড়ে-ছারপোকার উপদ্রব আছে। এ বার চোর! সরকারি হাসপাতাল থেকে নবজাতক চুরির ঘটনা ঘটল খাস কলকাতার বুকেই। শুক্রবার বিকেলে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এই ঘটনা সরকারি হাসপাতালের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে ফের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্রের খবর, কানিজ বেগম নামে এক মহিলা ১১ জানুয়ারি পুত্রসন্তান প্রসব করেন। ১২ তারিখে তাঁকে এবং তাঁর শিশুকে সাধারণ শয্যায় স্থানান্তরিত করা হয়। কানিজ বেগম শুক্রবার বেলা সাড়ে ৪টে নাগাদ চিকিৎসক ও নার্সদের জানান, তাঁর ছেলেকে তিনি দেখতে পাচ্ছেন না। হইচই পড়ে যায়। কিন্তু গভীর রাত পর্যন্ত ওই নবজাতকের খোঁজ পাওয়া যায়নি। পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দায়িত্বে থাকা আয়াকে আটক করেছে। বেনিয়াপুকুর থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। কী ভাবে নিখোঁজ হল শিশু? কানিজ বেগম বলেন, "ছেলে হওয়ার পর থেকেই এক মহিলা আমার সঙ্গে এসে গল্প করতেন। বলতেন, ওঁর আত্মীয়ও হাসপাতালে ভর্তি আছেন। ছেলেকে কোলে নিয়ে ওয়ার্ডেই ঘোরাতেন, ঘুম পাড়াতেন, আদর করতেন। তিনিই এসেছিলেন। বিকেলের পর থেকে ওই মহিলাকে দেখছি না, ছেলেও নেই!" হাসপাতালের ওয়ার্ডে বাইরের লোকের ভিড়ই যে এই ধরনের ঘটনার সুযোগ করে দেয়, তা স্বীকার করে নিয়েছেন ন্যাশনাল-কর্তৃপক্ষ। সুপার পার্থ প্রধানের কথায়, "রোগীদের আত্মীয়স্বজন যে যখন পারছে প্রসূতি ওয়ার্ডে ঢুকে পড়ছে। হাসপাতালে নিরাপত্তারক্ষী কম। তাঁদের পক্ষে এত লোকের কার্ড যাচাই করা সম্ভব নয়।" তিনি জানান, হাসপাতালের রক্ষীদের সাহায্য করার জন্য পুলিশ-কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা হয়েছিল। তাঁরা প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন। কিন্তু অতিরিক্ত রক্ষী এখনও আসেনি। এমনিতে হাসপাতালগুলিতে এক জন ইনস্পেক্টরের নেতৃত্বে পুলিশবাহিনী মোতায়েন থাকে। হাসপাতাল-চত্বরে থাকে পুলিশ ফাঁড়িও। তা সত্ত্বেও শিশু চুরি যাচ্ছে কী ভাবে? কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (সদর) জাভেদ শামিম বলেন, "সন্দেহ করা হচ্ছে, হাসপাতালের কার্ড হাতে নিয়ে ঢুকেই কেউ বাচ্চা চুরি করেছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।"
উলুবেড়িয়া মহকুমা হাসপাতাল | চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীর অভাবে চালু হচ্ছে না থ্যালাসেমিয়া ওয়ার্ড | নুরুল আবসার • কলকাতা | থ্যালাসেমিয়া রোগীদের জন্য পৃথক ওয়ার্ড তৈরি হয়ে পড়ে রয়েছে। পাঠানো হয়েছে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিও। কিন্তু চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী পদে নিয়োগ না-হওয়ায় এখনও চালু হয়নি ওয়ার্ডটি। ফলে থ্যালাসেমিয়া রোগীরা এই ওয়ার্ডে ভর্তিই হতে পারছেন না। বছরখানেক আগে উলুবেড়িয়া মহকুমা হাসপাতালে থ্যালাসেমিয়া ওয়ার্ড তৈরির প্রস্তাবটি আসে মেডিক্যাল কলেজের হেমাটলজি বিভাগ থেকে। 'জাতীয় গ্রামীণ স্বাস্থ্য মিশন' (এনএইচআরএম) প্রকল্পে ওয়ার্ডটি করা হয়েছে। মহকুমা হাসপাতালের দ্বিতলেই দু' কামরার ওয়ার্ডটিতে রাখা হয়েছে সাতটি শয্যা। হাসপাতাল সূত্রের খবর, প্রায় প্রতি দিনই দু'এক জন থ্যালাসেমিয়া রোগী এখানে আসেন। শুধু উলুবেড়িয়া মহকুমার ৯টি ব্লক নয়, কোলাঘাট, পাঁচলা, সাঁকরাইল, জগৎবল্লভপুর, ডোমজুড় প্রভৃতি এলাকা থেকেও রোগী আসেন। তাঁদের কাউন্সেলিং থেকে শুরু করে রক্ত দেওয়ার কাজ সবই করতে হয়। কিন্তু এই সব রোগীর জন্য পৃথক কোনও ব্যবস্থা নেই। সাধারণ রোগীদের সঙ্গে থ্যালাসেমিয়া রোগীদের চিকিৎসা হয়। সাধারণ রোগীদের ওয়ার্ডেই তাঁদের রেখে রক্ত দেওয়া হয়। পৃথক ওয়ার্ড চালু হলে এই সমস্যা অনেকটাই মিটবে। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ করা হলে থ্যালাসেমিয়া রোগীরা তাঁদের নিজস্ব ওয়ার্ডেই ভর্তি হতে পারবেন। এখানেই তাঁদের কাউন্সেলিং, রক্ত পরীক্ষা এবং রক্ত দেওয়ার ব্যবস্থা থাকবে। এ ছাড়াও থ্যালাসেমিয়া রোগীদের অন্য কোনও অসুখ হলে যেখানে বর্তমানে সাধারণ ওয়ার্ডেই ভর্তি করানো হয়, পৃথক ওয়ার্ডটি চালু হলে সেখানে ভর্তির ব্যবস্থা থাকবে। মাস চারেক আগেই ওয়ার্ডটি তৈরির কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রের খবর। শয্যা পাতা হয়েছে। তৈরি হয়েছে রক্ত পরীক্ষার ল্যাবরেটরি। এসে গিয়েছে চিকিৎসার উপযোগী বেশ কিছু দামী যন্ত্রপাতি। সেগুলি গুদামে রেখে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু চিকিৎসক, কাউন্সিলর, নার্স, ল্যাবরেটরি অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রভৃতি পদে নিয়োগ না হওয়ায় ওয়ার্ডটি এখনও চালুই করা যায়নি বলে জানিয়েছেন সদ্য বদলি হওয়া হাসপাতালের প্রাক্তন সুপার গৌরাঙ্গসুন্দর জানা। মূলত তিনি থাকাকালীনই ওয়ার্ডটি তৈরির কাজ শুরু এবং শেষ হয়। গৌরাঙ্গবাবু বলেন, "চিকিৎসক-সহ অন্যান্য পদে নিয়োগের দায়িত্ব জেলা স্বাস্থ্য দফতরের। আমি বহু বার এইসব পদে নিয়োগের জন্য জেলা স্বাস্থ্য দফতরকে জানিয়েছিলাম। জানি না বিষয়টি কোন অবস্থায় রয়েছে।" চিকিৎসক, কাউন্সিলর, নার্স, ল্যাবরেটরি অ্যাসিস্ট্যান্ট পদে খুব শীঘ্রই নিয়োগ হবে বলে জানিয়েছেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (সিএমওএইচ) স্বাতী দত্ত। তিনি বলেন, "ওই সব পদে নিয়োগের জন্য আইনানুগ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব নিয়োগ শেষ করে থ্যালাসেমিয়া ওয়ার্ডটি চালু করে দেওয়া হবে।"
রোগী-মৃত্যু, অভিযোগ গাফিলতির | নিজস্ব সংবাদদাতা • শিলিগুড়ি | চিকিৎসায় গাফিলতিতে রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠল মাটিগাড়ার একটি নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। শুক্রবার সকালে উত্তররায়ণ উপনগরী লাগোয়া ওই নার্সিহোমে বিক্ষোভ দেখান রোগীর পরিবারের লোকজন। তাঁদের অভিযোগ, গত শনিবার পথ দুর্ঘটনায় জখম হওয়ার পর রোগীকে ওই নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয়। বুধবার রোগী ভাল রয়েছে বলে তাঁকে আইসিইউ থেকে সাধারণ বিভাগে আনা হয়। বৃহস্পতিবার ফের আইসিইউতে নেওয়া হয়। টাকা দিতে দেরি হওয়ায় নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ চিকিৎসা শুরু করতে দেরি করেছে বলে অভিযোগ তোলা হয়েছে। বৃহস্পতিবারই রাত আড়াইটায় নাগাদ ঝুমকা ছেত্রী (৩৫) নামে ওই রোগী মারা যান। মৃতের বাড়ি মাটিগাড়ার মোটাজোতে। তিনি বালি-পাথর সরবরাহের ব্যবসা করতেন। নিজের ট্রাকও ছিল। ঘটনার পর চিকিৎসার গাফিলতির অভিযোগ তুলে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে চান রোগীর আত্মীয়রা। নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের লোকজন এবং সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক কথা বলতে চাননি বলে অভিযোগ। তার জেরেই গোলমাল শুরু হয়। রোগীর আত্মীয় এবং স্থানীয় লোকজন নার্সিংহোমে তালা ঝোলানোর চেষ্টা করতেই তাঁদের সঙ্গে কর্মীদের ধস্তাধস্তিও হয়। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে রোগীর লোকেদের সঙ্গে কথা বলেন নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ। মৃতের পরিবারের তরফে পুলিশে অভিযোগ জানানো হয়েছে। মৃতদেহ ময়নাতদন্ত করা হয়। ওই নার্সিংহোমের কর্ণধার ডব্লিউ এইচ চ্যাং বলেন, "চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ ঠিক নয়। দুর্ঘটনা ওই রোগীর মাথায়, বুকে, পায়ে চোট ছিল। কিছুটা ভাল হয়ে উঠলেও ফের অবস্থার অবনতি হয়। চেষ্টা করেও তাঁকে বাঁচানো যায়নি।" রোগীর পরিবারের দাবি, নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ শুরু থেকেই টাকার জন্য চাপ দিচ্ছিল। টাকা বাকি থাকলে মিটিয়ে দেওয়া হবে বলে চিকিৎসায় যাতে সমস্যা না হয়, তা দেখতে অনুরোধ করা হয়েছে। মৃতের দাদা সেটে ছেত্রী বলেন, "টাকা সময়ে না পাওয়ায় চিকিৎসা ঠিকঠাক করেননি নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ। এটা মানা যায় না।" গত শনিবার সায়েন্স সিটির কাছে একটি বাইকের সঙ্গে পণ্যবাহী ছোটগাড়ির সংঘর্ষ হয়। তাতে বাইক চালকের মৃত্যু হয়। ঝুমকা ছেত্রীকে গুরুতর জখম হয়েছিলেন।
রোগী-মৃত্যু, অভিযোগ গাফিলতির | নিজস্ব সংবাদদাতা • শিলিগুড়ি | চিকিৎসায় গাফিলতিতে রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠল মাটিগাড়ার একটি নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। শুক্রবার সকালে উত্তররায়ণ উপনগরী লাগোয়া ওই নার্সিহোমে বিক্ষোভ দেখান রোগীর পরিবারের লোকজন। তাঁদের অভিযোগ, গত শনিবার পথ দুর্ঘটনায় জখম হওয়ার পর রোগীকে ওই নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয়। বুধবার রোগী ভাল রয়েছে বলে তাঁকে আইসিইউ থেকে সাধারণ বিভাগে আনা হয়। বৃহস্পতিবার ফের আইসিইউতে নেওয়া হয়। টাকা দিতে দেরি হওয়ায় নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ চিকিৎসা শুরু করতে দেরি করেছে বলে অভিযোগ তোলা হয়েছে। বৃহস্পতিবারই রাত আড়াইটায় নাগাদ ঝুমকা ছেত্রী (৩৫) নামে ওই রোগী মারা যান। মৃতের বাড়ি মাটিগাড়ার মোটাজোতে। তিনি বালি-পাথর সরবরাহের ব্যবসা করতেন। নিজের ট্রাকও ছিল। ঘটনার পর চিকিৎসার গাফিলতির অভিযোগ তুলে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে চান রোগীর আত্মীয়রা। নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের লোকজন এবং সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক কথা বলতে চাননি বলে অভিযোগ। তার জেরেই গোলমাল শুরু হয়। রোগীর আত্মীয় এবং স্থানীয় লোকজন নার্সিংহোমে তালা ঝোলানোর চেষ্টা করতেই তাঁদের সঙ্গে কর্মীদের ধস্তাধস্তিও হয়। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে রোগীর লোকেদের সঙ্গে কথা বলেন নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ। মৃতের পরিবারের তরফে পুলিশে অভিযোগ জানানো হয়েছে। মৃতদেহ ময়নাতদন্ত করা হয়। ওই নার্সিংহোমের কর্ণধার ডব্লিউ এইচ চ্যাং বলেন, "চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ ঠিক নয়। দুর্ঘটনা ওই রোগীর মাথায়, বুকে, পায়ে চোট ছিল। কিছুটা ভাল হয়ে উঠলেও ফের অবস্থার অবনতি হয়। চেষ্টা করেও তাঁকে বাঁচানো যায়নি।" রোগীর পরিবারের দাবি, নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ শুরু থেকেই টাকার জন্য চাপ দিচ্ছিল। টাকা বাকি থাকলে মিটিয়ে দেওয়া হবে বলে চিকিৎসায় যাতে সমস্যা না হয়, তা দেখতে অনুরোধ করা হয়েছে। মৃতের দাদা সেটে ছেত্রী বলেন, "টাকা সময়ে না পাওয়ায় চিকিৎসা ঠিকঠাক করেননি নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ। এটা মানা যায় না।" গত শনিবার সায়েন্স সিটির কাছে একটি বাইকের সঙ্গে পণ্যবাহী ছোটগাড়ির সংঘর্ষ হয়। তাতে বাইক চালকের মৃত্যু হয়। ঝুমকা ছেত্রীকে গুরুতর জখম হয়েছিলেন।
পর্যটন থেকে রাজস্ব বৃদ্ধির নিদান মমতার | সুব্রত গুহ • দিঘা | দিঘাকে 'গোয়া' করেই থেমে থাকতে চান না তিনি। দিঘা-মন্দারমণিকে আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তুলতে চায় তাঁর সরকার। শুক্রবার বিকেলে দিঘায় 'সৈকত উৎসব'-এর উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, "বাঙালি ঘুরতে বাইরে যায়। এ বার বাংলার বাইরে থেকে মানুষ আসবেন এ রাজ্যের পাহাড়, জঙ্গল, সাগরে। পর্যটন থেকে রাজস্ব-আয় বাড়বে। সিনেমার স্যুটিং করতেও আর বাইরে যেতে হবে না।" তাঁর কথায়, "বলেছিলাম দিঘাকে গোয়া করব। এখন বলছি, তার চেয়েও এগিয়ে ভাবতে চায় সরকার।" | | পাশাপাশি সৈকত উৎসবের উদ্বোধনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিনেত্রী পাওলি দাম। | বৃহস্পতিবারই ঝাড়গ্রামে জঙ্গলমহল উৎসবের সমাপ্তি দিনে ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়ার ঝিলিমিলি, জয়পুর জঙ্গল, শুশুনিয়া পাহাড়, পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়কে ঘিরে পর্যটন-সার্কিট গড়ার স্বপ্নের কথা বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। ঝাড়গ্রাম থেকে সরাসরি সে দিন বিকেলেই দিঘায় পৌঁছন মমতা। সন্ধ্যায় মন্দারমণিও ঘুরে আসেন। সেখানে স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রতিনিধি, প্রশাসনিক আধিকারিক, হোটেল-লজের পরিচালকদের সরাসরিই বলেন, "সৈকতে বেআইনি নির্মাণ বরদাস্ত করবে না সরকার। পরিবেশ ও উপকূল-বিধি কঠোর ভাবে মেনে চলতে হবে।" মন্দারমণিতে অবৈধ নির্মাণের অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। সৈকতের পরিবেশ ধ্বংস যে আদর্শ পর্যটন কেন্দ্র গড়ার পথে বাধাসেটাই বুঝিয়ে দিতে চেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী রাত্রিবাস করেন দিঘায় বিদ্যুৎ দফতরের বাংলোয়। শুক্রবার দুপুরে তাঁর প্রথম কর্মসূচি ছিল জেলা প্রশাসনের আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠক। বৈঠকটি হয় ওডিশা-সীমানায় দত্তপুরে মৎস্য দফতরের গেস্ট হাউসে। হাজির ছিলেন মুখ্যসচিব সমর ঘোষ-সহ একাধিক আমলা ও সেচমন্ত্রী মানস ভুইয়া, নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম-সহ আট-আট জন মন্ত্রী। ছিলেন পূর্ব মেদিনীপুরের দুই সাংসদ শিশির ও শুভেন্দু অধিকারী, তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়। | | দিঘায় সৈকত উৎসবের উদ্বোধন করছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। | উন্নয়নের নানা প্রকল্প-পরিকল্পনা নিয়ে মন্ত্রী, সচিব, জেলাশাসক, এসডিও, বিডিও-দের সঙ্গে আলোচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী। দিঘা উপকূলের ভাঙন রোধে পরিবেশ, সেচ, পর্যটন, নগরোন্নয়ন দফতর মিলে সুসংহত পরিকল্পনা তৈরির নির্দেশ দেন সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইয়াকে। প্রশাসনিক বৈঠক শেষে বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ উৎসব-মঞ্চে পৌঁছন সপার্ষদ মুখ্যমন্ত্রী। অভিনেত্রী পাওলি দামও তখন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে। প্রদীপ জ্বেলে চার দিনের উৎসবের উদ্বোধন করেন মমতা। উৎসব উপলক্ষে আলোকমালায় সেজেছে দিঘা। আয়োজন হয়েছে ওয়াটার স্পোর্টসের। সৈকতে টেন্টের ব্যবস্থাও হয়েছে। দু'মাসের প্রস্তুতিতে উৎসবের যে আয়োজন হয়েছে, তাতে তিনি যে 'খুশি', নিজের বক্তৃতায় তা জানিয়ে দেন মমতা। তাঁর বক্তৃতার সময়ে উৎসব-মঞ্চ ঘিরে হাজার কুড়ি মানুষের ভিড় বক্তৃতা শেষেই পাতলা হতে শুরু করে। মুখ্যমন্ত্রী যদিও রাত্রিবাস করছেন সৈকত শহরেই। আজ, শনিবার ফিরবেন কলকাতায়। | ছবি: পার্থপ্রতিম দাস | |
|
|
|
|
|
|
|
|
No comments:
Post a Comment